দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলায় এখন তুঁত ফলের চাষ হয়। এ ফল রসালো ও সুস্বাদু হলেও বাংলাদেশে তুঁত কখনও ফলের জন্য চাষ করা হয় না। তবে আফগানিস্তান এবং উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে তুঁত চাষ করা হয় ফলের জন্য।ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক ফল মিলে একটি ফলের গুচ্ছ তৈরি করে, এ ফল বেরি জাতীয়। এ দেশে তুঁত গাছে প্রচুর ফুল আসে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মৌসুমে এবং ফল পাকে মার্চ-এপ্রিল মৌসুমে। কাঁচা ফলের রঙ সবুজ। তবে পাকলে টকটকে লাল ও সম্পূর্ণ পাকলে কালচে হয়ে যায়। কাঁচা-পাকা ফল যখন গাছে প্রচুর ধরে, তখন তা এক দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যের সৃষ্টি করে।
তুঁতের লালচে কালো ফল খুবই রসালো, নরম, মিষ্টি-টক ও সুস্বাদু। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার জন্য পাকা তুঁত ফল উপকারী। এ ছাড়া পাকা ফলের টক-মিষ্টি রস বায়ু ও পিত্তনাশক, দাহনাশক, কফনাশক ও জ্বরনাশক। এ ফল টক নয়, স্বাদে খুব মিষ্টি ও রসালো। পাকা তুঁত ফলের রস থেকে জ্যাম, জেলি ও স্কোয়াশ বা পানীয় তৈরি করা যায়। অর্থাৎ এটি একটি সম্ভাবনাময় আর্থিক খাতের উৎস হয়ে উঠতে পারে।
মালবেরি ফল বা তুঁত ফলের ভরা মৌসুমে মার্চ মাসের শুরু থেকেই লালমনিরহাটে কিছু ফল বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তুঁত চাষিদের বাগানে এখনও বেশ কিছু ফল রয়েছে। ভরা মৌসুমে রসে ভরা এ ফল ১শত ৫০টাকা থেকে ২শতটাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তুঁত চাষি, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড ও রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, মালবেরি ফল বা তুঁত ফল চাষিদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের জোগান দেয়। কারণ তুঁত চাষি তুঁত গাছ বা বাগান থেকে রেশম চাষিদের কাছে তুঁত পাতা বিক্রি করে আয় করে থাকে। এর পাশাপাশি ফলও বিক্রি হচ্ছে।মূলত ব্যক্তি উদ্যোগে ওই সব জাতের মালবেরির আবাদ হলেও সম্প্রতি সরকারিভাবেও এই চাষ সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নওদাবাস ব্লকের রামজিবন, ভোলার চওড়া ও বড়বাড়ী ইউনিয়নের ঘোরামারা রোড মুসার তেপুতিতে প্রদর্শনী আকারে এসব জাতের তুঁত গাছের চাষ করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের হরিদাস টেপারহাট গ্রামে অ্যাড. ময়জুল ইসলাম ময়েজ-এঁর বাগানের গাছে তুঁত ফল ধরতে দেখা গেছে। অ্যাড. ময়জুল ইসলাম ময়েজ শখ করে বাগানে অন্যান্য ফলজ গাছের পাশাপাশি এ গাছও লাগিয়ে ছিলেন। সে গাছগুলোতে এখন ফল ধরা শুরু করেছে। যা বর্তমানে পাকতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড, রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্র লালমনিরহাট কর্তৃক রাস্তার দু-ধারে ব্লক পদ্ধতিতে তুঁত গাছ রোপণ করা হয়েছে। অর্থায়নে রেশম চাষের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলার দারিদ্র হ্রাসকরণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উক্ত প্রদর্শনীগুলো দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।